ঢাকা,সোমবার, ১৮ নভেম্বর ২০২৪

চকরিয়ায় আগর বাগান কেটে অবৈধ বসতি: ৯ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনে মন্ত্রীর দপ্তরে অভিযোগ

imagesএম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া ::

চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নে বনবিভাগের মালিকানাধীন উচিতারবিল এলাকায় ৯০ হেক্টর আগর বাগান কেটে সাবাড় করার পর সেখানে অবৈধ বসতি নির্মাণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। স্থানীয় প্রভাবশালীরা বনবিভাগের ফাসিয়াখালী রেঞ্জের তৎকালীন কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে সামাজিক বনায়নের আওতায় এলাকার ১৮০জন উপকারভোগীর মাঝে বরাদ্ধ দেয়া আগর বাগানকে বিএস সিটে আবাদি জমি দেখিয়ে দখলে নিয়ে এসব অনিয়ম করেছে। এ ঘটনায় সরকার ও উপকারভোগী অংশিদারদের প্রায় ৯ কোটি টাকার ক্ষতিসাধন হয়েছে।

এ ঘটনায় আগর বাগানের অংশিদারদের পক্ষে চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের পশ্চিম পুকপুকুরিয়া গ্রামের মরহুম মাষ্টার আবুল খাইর’র ছেলে মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম মৌলা ও পৌরসভার কাহারিয়াঘোনা গ্রামের মরহুম চাঁদ মিয়ার ছেলে মুক্তিযোদ্ধা আবুল হাশেম বাদি হয়ে ইতোমধ্যে ১২জনকে আসামি করে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনপুর্বক উপকারভোগীদের নামে বরাদ্ধ দেয়া আগর বাগান ফেরত পেতে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সরকারের গুরুত্বপুর্ণ ৬জন মন্ত্রীর দপ্তরে লিখিত আবেদন পাঠিয়েছেন। চলতিবছরের পহেলা অক্টোবর দুই মুক্তিযোদ্ধা স্বাক্ষরিত লিখিত আবেদনের কপি পাঠানো হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী এবং মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রীর দপ্তরে। লিখিত আবেদনে বিবাদি করা হয়েছে ১২জনকে।

লিখিত আবেদনের দুই মুক্তিযোদ্ধা দাবি করেন, ২০০৮-০৯অর্থবছরে সামাজিক বনায়নের আওতায় কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের চকরিয়া উপজেলার ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের উচিতারবিল এলাকায় ৯০ হেক্টর বনাঞ্চলে আগর বাগান সৃজন করেন ফাসিয়াখালী রেঞ্জের বনকর্মীরা। পরে বনবিভাগ ৯০ হেক্টর বনাঞ্চল দলিলপত্র বুঝিয়ে দেয়ার মাধ্যমে অংশিদারিত্বের ভিত্তিতে স্থানীয় ১৮০জন উপকারভোগীর মাঝে বরাদ্ধ দেন। বরাদ্ধ পাওয়া ১৮০জনের মধ্যে ১৫৪ পুরুষ ও ২৬জন নারী রয়েছেন। এদের মধ্যে আবেদনকারী দুইজন মুক্তিযোদ্ধাও আছেন।

লিখিত আবেদনে মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম মৌলা ও আবুল হাশেম লিখিত অভিযোগে দাবি করেন, বনায়ন সৃজন করার পর কয়েকবছর উপকারভোগীরা ভালভাবে রক্ষনাবেক্ষন করে বাগানের পরিচর্যা করে আসছিলেন। কিন্তু ফাসিয়াখালী রেঞ্জে তৎকালীন রেঞ্জ কর্মকর্তা মতিউর রহমান যোগদানের পর থেকে সব কিছু বদলে যেতে শুরু করে। মুক্তিযোদ্ধারা দাবি করেন, আবেদনে উল্লেখিত এক নম্বর বিবাদির সাথে যোগসাজস করে রেঞ্জ কর্মকর্তা মতিউর রহমান তার অধীনস্থ কর্মকর্তা ও সার্ভেয়ারকে দিয়ে আগর বাগান এলাকাটি আবাদি জমি হিসাবে দেখিয়ে কৌশলে বিবাদি পক্ষকে জবরদখলের সুযোগ সৃষ্টি করে দেন। ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের উচিতারবিল মৌজার আগর বাগানের ওই জায়গাটি বিএস জরিপে আবাদি জমি থাকার কোন ধরণের প্রমাণ নেই। কিন্তু শুধুমাত্র অবৈধ দখলের উদ্দেশ্যে একে অপরের যোগসাজসে সরকারের বিপুল পরিমাণ আগর বাগান দখলের পর এখন কেটে সাবাড় করা হয়েছে। বর্তমানে সেখানে গড়ে তোলা হচ্ছে অবৈধ বসতি।

অভিযোগের বাদি মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম মৌলা ও আবুল হাশেম দাবি করেন, প্রায় ৬বছর ধরে আগর বাগানের বিশাল এ জায়গা বিবাদি পক্ষের সুবিধাভোগী লোকজন দখলে নিলেও এব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহনে কক্সবাজার উত্তর বনবিভাগের কর্মকর্তারা কোন ধরণের ভুমিকা পালন করছেনা। এমনকি বর্তমানে যাঁরা দায়িত্ব পালন করছেন তারাও সরকারের বিপুল এ জায়গা অবৈধ দখলমুক্ত করতে ব্যবস্থা নিচ্ছেনা।

এ অবস্থার কারনে ভুক্তভোগী ১৮০জন উপকারভোগীর পক্ষ থেকে গাছ কেটে ধ্বংস করে দেয়া ফাসিয়াখালী ইউনিয়নের উচিতারবিলের আগর বাগানের জায়গা উদ্ধারে সরকারের বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু’র জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মুক্তিযোদ্ধা গাজী গোলাম মৌলা ও আবুল হাশেম। একই সাথে কেটে নিধন করে দেয়া বাগান পুনরায় সৃজনের ব্যবস্থা গ্রহনের পাশাপাশি ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে তদন্তপুর্বক প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। #

পাঠকের মতামত: